Friday, March 23, 2012

বিবেক যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ

আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এখন কিসের রূপ নিচ্ছে তা বুঝতে পারছিনা। এটা কোনো রাজনৈতিক কুফল না আমাদের কারো পাপের ফসল সেই ব্যাপারটিও এখন বোধগম্য নয়। যেখানে ধর্মপ্রিয় ও শান্তশিষ্ট মানুষদের কলংকের কালিমা লেপন করে হরদম ঘোটা জাতিকে ভৎসনা করা হচ্ছে। সেখানে এরকম বিভাজিত সুর আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কতখানি সুখর তা কারোর জন্য মোটেও ভালো ব্যাপার নয়। দেশের সংবিধানে ও আইনে কিছু বিষয়ের উপর বাধ্যবাধকতা আছে চাই তা রাজনীতিতে হোক আর নাগরিকদের কল্যাণের জন্য হোক। সংবিধানে রাজনৈতিক নেতা কর্মী ও সাধারণ নাগরিকের জন্য আলাদা কোনো আইন রচিত হয়নি। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য হয়ত কেউ একটু বেশি সুযোগ সুবিধা লাভ করতে পারেন। তবে এটা শুধু কর্তব্যের খাতিরে হতে পারে। সাম্প্রতিক কালে সেই সকল গতানুগতিক আইন যেন ক্ষমতার রাগব বোয়ালদের কাছে পিষ্ট। মনে হচ্ছে এখানে সুনির্দিষ্ট নিয়মীতির বালাই পর্যন্ত নেই। বক্তৃতা আর মুখরোচকময় উপমা দিলেই বেশ কাজ আর কিছু নয়। যার কারনে ক্রমশ: কিছু স্বার্থসিদ্ধির কাছে মানবতার বাণী এখন অস্তমিত।

বর্তমান কালে আমাদের যে বিষয়টি অন্তরে টনক নাড়ে তা হল গত কয়েক মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজ এর মত নামিদামী শিক্ষাঙ্গন থেকে কিছু নামাজি শান্ত শিষ্ট মেয়েদেরকে কতিপয় বেনিয়া শব্দ ও বিভিন্ন অপরাধমূলক বাক্য ছুড়ে দিয়ে তাদেরকে অযৌক্তিকভাবে দোষী সাব্যস্ত করে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু কেন তাদেরকে এরকম শাস্তি দেয়া হল?

অথচ সুনিদিষ্ট কোনো অভিযোগ না পেলে যেমন কাউকে শাস্তি দেয়াটা অন্যায় তেমনি এটা আমাদের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। তবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দেখাতে পারেনি। বরঞ্চ অভিযোগ পাওয়া গেছে অভিযুক্তরা হল ও কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রীদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। জঙ্গী সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার উপলক্ষে দাঁড় করানো মাত্র। এর মধ্যে র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্ণেল জিয়াউল হাসান বলেছেন,‘ আটককৃত ছাত্রীদের বিরুদ্ধে জঙ্গিসম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ মেলেনি’। হল প্রক্টর বললেন অন্য কথা, ‘ভবিষ্যতে তারা হলের পরিবেশ বিনষ্ট করতে পারে এজন্য তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে’। এখন কথা হল,বর্তমান আধুনিক দুনিয়ায় খারাপ কাজের ছড়াছড়ির মাত্রা অত্যধিক,এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই বলে কিছু নামাজী শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে এরকম ভবিষ্যত সন্দেহের অবকাশ, আর সেই ভবিষ্যত অপরাধের জন্য অগ্রিম শাস্তি প্রদান, এটার মানে কি দাঁড়ায়? তাদের অভিযোগগুলো খন্ডন করলে আমাদের কাছে অনেক প্রশ্নের জন্ম নেয়। যদি প্রশাসন আদৌ সেখানে কোনো ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে থাকে তবে সেটি হবে কারো আজ্ঞাবহ হওয়ার জন্য। কারণ, শুধু মাত্র নামাজ ও ধর্মের আচার ব্যবহার পালন করার দোহাই দিয়ে যদি কাউকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে হয়,তবে যারা ক্যাম্পাসে অহরহ অনৈতিক ক্রিয়া কলাপে ব্যস্ত,উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়ার পরও কেন তাদের বিচার করা হচ্ছেনা।

৯০ শতাংশ মুসলমানের বাসভূমিতে এখানে মেয়েরা ধর্মীয় অনুভূতি সম্পন্ন শালীন পোশাক, বোরকা কিংবা হেজাব ধারণ করবে এটা খুবই স্বাভাবিক এবং এটা আমাদের সংবিধান স্বীকৃত। যে জায়গায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষাঙ্গনে মেয়েরা তাদের ধর্মের স্বাধীনতা পায়, সেখানে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেয়েরা এ রকম পোশাক পরতে পারবেনা? তবে কি আমরা ভেবে নেব যে, আমাদের সোনার বাংলাতে আমরা নতুন কিছু আমদানী বা সৃষ্টি করতে যাচ্ছি?

আমরা কি ভূলে গেছি শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগ নেতা নেত্রীদের কান্ড কীর্তি? ঐ নামাজী মেয়েগুলোর আপাত: দৃষ্টিতে পর্দা, ধর্মীয় আলাপ আলোচনা করলে যদি মারাত্মক অপরাধী বলে সাব্যস্ত হতে হয়, তবে যে সংগঠনের নেত্রীরা সরাসরি টাকার বিনিময়ে দেহ ব্যবসায় জড়িত থাকার বিষয় প্রমাণিত (বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত) সীট বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজী, ও কুরুচীপূর্ণ আচরণে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছে বরাবর নেতিবাচক ও আতঙ্কেও নাম। সেই জায়গায় তারা কেন পার পেয়ে যাচ্ছে? যেখানে ছাত্রলীগের কাজী নাসির উদ্দিন মানিকের মত নেতারা ধর্ষণের উপর সেঞ্চুরী করে শাস্তির বদলে পুরুস্কৃত হয়, কিছু ছাত্রী নামধারী বেশ্যা প্রকৃতির নেত্রীরা মন্ত্রী ও দলের উর্ধ্বতন নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে রাতবিরাত নিজেদের বিলিয়ে দেয়, সেখান থেকে আমরা কিভাবে আগামী দিনের শেখ হাসিনা, সাহারা, দীপু মনি ও ইসমত আরাদের স্বপ্ন দেখি? আমাদের চোখে ও মুখে কি এতটুকু আত্মসম্মানবোধ নেই?

আমাদের পিতামাতারা আমাদের অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে শিক্ষার্জনের পাঠান, আর আমরা এখানে এসে নিজেদেরকে বিলিয়ে দেই নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত সাগরে। কোনো বাবা মা কি চাইবে তার আদরের মেয়ে রাজপথে, রাতের আধারে নিলর্জ্জতায় ডুবে যেতে, কিংবা শিক্ষার নামে মাদকতায় বিভোর হতে? আবার আমাদের বাবা মারা নিশ্চয়ই এটাও চাইবেনা যে, ক্যাম্পাস থেকে ডিগ্রীর বদলে আবু বকর, ফারুক, নোমানী, মহিউদ্দিনের মত লাশ হয়ে ফিরে যেতে।

শিক্ষকের কাছে ক্লাসের মেধাবী ছাত্র ও কম মেধাবী ছাত্র সবাই সমান। একজন শিক্ষক পারেন একটি নৈতিকতা সম্পন্ন জাতি গড়তে। এটা শুধু তার ঐকান্তিক চেষ্টা আর ইচ্ছার উপর সম্ভব। আর আমরা দেখলাম, সম্মানিত কয়েকজন শিক্ষকরা ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা নেত্রীদের অঙ্গুলির ইশারায় সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ ছাড়াই যেখানে তাদেরকে বহিষ্কার করার মত পিড়াদায়ক শাস্তি দিলেন, সেখানে তাদের ভুমিকা ও আত্মসম্মানবোধ নিয়েও আমাদের কাছে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হয়। যদি কারো ভয়ে তারা এরকম সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে এ জাতি হিসেবে আমাদের চিন্তা করা উচিত আমরা কোথায় আছি আর কি করার আছে।

জানা দরকার যে, মিথ্যাকে সত্যের উপর বেশিদিন ঠিকে রাখানো যায় না। আর হিংসা প্রতিহিংসাই ডেকে আনে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে আগামী সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সকল উর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গসহ আমাদের সকলের উচিত নিজেদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখা। আর এর মাধ্যমে একটি নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন জ্ঞান ভিক্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করা।

স্বাধীনতার চল্লিশ বছর: প্রশ্নবিদ্ধ দেশপ্রেম

২৬শে মার্চ এলেই মনে পড়ে একটি বিজয়,আত্মত্যাগ,বেঁচে থাকার আকুলতা ও প্রেরণার দ্বীপশিখা। এদিনই পৃথিবীতে বাংলাদেশ নামে একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে। অন্য কোনো রাষ্ট্রের মত ঔপনিবেশিক সরকারের সাথে দলিল দস্তাবেজ নিয়ে আলোচনার টেবিলে এ রাষ্ট্র স্বাধীন হয়নি। এদেশের আপামর জনতা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দখলবাজদের কবল থেকে মাতৃভূমি উদ্ধার করেছে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৪০টি বসন্ত অতিক্রম করেছে। একটি প্রজন্ম অতিবাহিত হয়ে আরেকটি নতুন প্রজন্মের সূচনা ঘটেছে। কিন্তু স্বাধীনতা শব্দটির সঙ্গে যে স্বপ্ন ও স্বাধ একসময় দেশবাসী দেখেছিল আজও তা বাস্তব কুসুমে প্রস্ফুটিত হয়নি। আজও পরাধীনতা ও বন্দিদশা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। বিরাজমান কলুষিত রাজনীতির কবলে এখনো পরাধীনতার গন্ধ আলো-বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে।

উন্নয়নের পথে অগ্রগ্রামী হওয়ার প্রাক্কালে বিভিন্ন অশুভ শক্তির প্ররোচনা ও বাধায় বারবার হোঁচট খাচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। দেশে সর্বত্র এখন বহুমূখী ও সর্বব্যপী র্সবনাশের ঘন্টাধ্বনি বাজছে।
যে দেশের স্বাধীনকামী মানুষের রক্তে ও মননে ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙের ফেলার প্রয়াস সেই সকল প্রাণ পুরুষের উত্তরসূরীদের তথাকথিত স্বার্থান্বেষী রাজনীতির নির্মম বলি হচ্ছে তাদের ধ্যান-ধারণা ও স্বপ্নের।
দেশমাতার স্বার্থসিদ্ধি বিলিয়ে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে তথাকথিত রাজনীতিক কপটতার মধ্যে জন্ম নিচ্ছে হাজারো মীর জাফর আর ঘসেটিদের। আর তারা উঠে পড়ে লেগেছে ক্ষমতাধর হওয়ার প্রতিযোগিতায়।

ফলস্বরুপ চলমান রাজনীতিতে গণতন্ত্রের অচলায়ন অবস্থা চলছে। এর আবরণে রাজনৈতিক প্রহসনের ঘটনা ঘটছে। রাজনীতিক নেতৃবৃন্দের দেশপ্রেম নিয়ে সংশয় এখন আবালবৃদ্ধবণিতার কাছে। স্বাধীনতা প্রশ্নে যেখানে সবাই ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ভূলে কাধে কাধ মিলিয়ে অনাহারে, উপবাসে দেশকে হানাদার মুক্ত করেছিলেন সেখানে ৪০বছর পর সৃষ্টি হয়েছে রাজনীতির ধারা উপধারা।
হয়েছে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আর বিপক্ষের। একপক্ষ ক্ষমতায় অধিষ্ঠ আর অপর পক্ষ তা লাভে বিভোর।

একদিকে ক্ষমতাসীনদের একদর্শিতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মিডিয়া দলন, শিশু কিশোর নির্যাতন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অঙ্গসংগঠনের বেপরোয়া আচরণসহ বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক কার্যক্রমে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এখন মলিন। তাদের অগণতান্ত্রিক মনোভাবের ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গরম না পড়তেই তীব্র লোডশেডিং, প্রশাসনকে দলীয়করণ, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, শেয়ারবাজারে ধস, বিনা মূল্যে অন্য দেশকে ট্রানজিট প্রদান, উদার গণতান্ত্রিক ধারণা, অসাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতির উত্তরণের নামে একটা ঘোলাটে ও বিভাজন অবস্থার সৃষ্টি করছে।

সমাজের অভ্যন্তরে টিকে থাকা এরুপ বিভাজিত নানা শক্তির সয়লাব ও বাস্তবতাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে এসেছে, যা আগে এতটা স্পষ্ট দৃঢ় ও সুসংগঠিত ছিল না। একের পর এক মতার পট পরিবর্তন, অশুভ এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রতিরা ও নিরাপত্তা নীতি, শিক্ষানীতি বিশেষ করে শিক্ষানীতিকে ইসলামমুক্ত করে পশ্চিমা ধাঁচে সাজানো, দেশের মুক্ত বুদ্ধিভিত্তিক সংস্কৃতিতে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল গড়তে সেক্যুলার অপসংস্কৃতির সয়লাব সৃষ্টি করছে। এর কারণে যারা আত্মিক টানে দেশের ঐতিহ্যের লালন এবং ভারতীয় নাশকতা-আগ্রাসন থেকে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রায় বদ্ধপরিকর ছিলেন, তাদেরকে আজ স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী জঙ্গিবাদদের দোসর হিসেবে নির্মূলের জন্য টার্গেট করা হয়েছে। সবকিছুকে দলীয়করণ ও ঢেলে সাজানোর পাঁয়তারা চলছে। অপরদিকে বর্তমান পররাষ্ট্রনীতিও দিল্লি তুষ্টে আবর্তিত। জনগণের জাতীয় নিরাপত্তাকে বিকিয়ে তার অভিভাবকত্ব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার জন্য সরকার একরকম উঠে পড়ে লেগেছে। বিনা শুল্কে ট্রানজিট প্রদান করে যে সখ্যতা সরকার তৈরি করেছে তার বদৌলতে সীমান্তে ফেলানীর মতো শান্ত পাখিরা দিনের পর দিন লাশ হচ্ছে। কাউকে আবার গুম করে রাখা হচ্ছে তার কোনো হিসেব নিকেশ ও প্রতিবাদ জানানোর মতো যেন দায়িত্ব সরকারের নেই।

আর বরাবরের মত অপর শক্তি তথা বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাও সর্বাবস্থায় সরকারের নয় রাষ্ট্রেরও বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত। সরকার পতনের নামে হরতাল,ভাংচুরসহ বিভিন্ন দীর্ঘ কর্মসূচী ডেকে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ও জনগণের রাজনীতির ধ্যান-ধারণা পাল্টে দিচ্ছে।বড় বড় বক্তৃতা দিয়ে দেশকে বিভাজিত করার দিকে টেলে দেয়া হচ্ছে।

এসবের কারণে বরাবরের মতো বাংলাদেশের নেতিবাচক খবর হিসেইবেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় স্থান পেয়েছে। এমনকি ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যে ৩৭টি দেশের তালিকা তৈরি হয়েছে, সেই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। দ্য গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসিসহ বিশ্বের প্রধান গণমাধ্যমে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের ওয়েব সাইটে বাংলাদেশের বর্তমান কলুষিত চিত্র ফুটে উঠেছে ।
আর রাজনীতির এমন সূচীর প্রভাব পড়েছে দেশের হাটে-ঘাটে, শিক্ষাঙ্গনে। এর মধ্যে সাম্প্রতিককালে স্বার্থান্বেষী রাজনীতির ছোঁয়া লেগেছে শিক্ষকদের নিষ্প্রভ দেহে। শিক্ষকরা এখন শিক্ষাদানের মত মহান পেশাকে কলুষিত করছেন। তাদের কাছে আজ শিক্ষার্থীরাও নিরাপদবোধ করছে না। তাদের রাজনীতি সূলভ আচরণে বেপরোয়া হওয়ায় স্বয়ং শিক্ষার্থীরা দিক ভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট হচ্ছে। যাদের বদৌলতে শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব ও কর্তব্য বেমালুম ভূলে কলমের বদলে হাতে অস্ত্র নিয়ে মরণ খেলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আর ব্যবহৃত হচ্ছে রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবে। তাদের সংঘাতে ক্যাম্পাসে মারামারি, সংঘর্ষ, হত্যা ও চাদাবাজি, টেন্ডারাজি এখন নৈত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে নিরীহ মেধাবীরা অকালে ঝরে পড়ছে। দেশ হারাচ্ছে সম্ভাবনাময় যোগ্য দায়িত্বশীল।

দেশের চলমান রাজনীতি উত্তরণ বিশ্লেষণে যে বিষয়টি ফুটে উঠে তা নিয়ে আমাদের জাতিসত্ত্বা ও স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ। যে সংগ্রাম আর স্বপ্ন ধারণ করে দেশকে শত্রু মুক্ত করা হয়েছিল আজ সেই দেশে একই ভৌগলিক এরিয়ায় একই সীমানায় জন্ম নিচ্ছে আত্মকলহ, বিভক্তি ও বিভাজন। আর ত্যাগীর বদলে বিশ্বের কাছে আমরা পরিচিত হচ্ছি নিচু মনমানসিকতার জাতি হিসেবে। আর এসবের ক্ষেত্রে সুযোগ নিচ্ছে দখলবাজ ও দেশবিরোধীরা।

এতাবস্থায় বিরাজমান রাজনীতিতে উদারনীতির নামে প্রহসনের অবস্থা চললে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনের মত লালিত স্বপ্নও ধূলিস্মাৎ হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। আর আগামীতে গণতন্ত্রের ধারা কতটুকু বিরাজমান থাকবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে।
আগামী সোনালী দিনের রাজনৈতিক সূচি ও বাস্তবতা এখন নির্ভর করছে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ও বিরোধী দলের সতর্ক দৃষ্টির উপর। ২৬ মার্চের চেতনায় উদ্ধুব্ধ হয়ে সব রকম বিভেদ-বিচ্ছেদ ভূলে সংকীর্ণ ও স্বার্থ চিন্তাকে জলাঞ্জলি দিয়ে দেশগড়ার কাজে সকলের উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা। এক্ষেত্রে আত্মবিলাস ও আত্মতুষ্টি নয় বরং জনগণের কাম্য বিষয়কে সচেতনভাবে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশ ও দশের সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতিকে বেগবান করা হলো সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারার পরিচায়ক।